কোরবানির মাংস কতদিন সংরক্ষণ করা যায়
বাংলা নিউজ নেটওয়ার্ক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জুলাই ২০২১, ২:১১:৫৮ অপরাহ্ন

মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পছন্দের পশু কোরবানি করেন বান্দা। একজন সাম’র্থ্যবান মু’সলিমের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব। তবে পশু কোরবানি করার কিছু শর্ত আছে। সেগুলো মেনে কোরবানি না করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। কোরবানির একমাত্র উদ্দেশ্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি। লোক দেখানো কিংবা মাংস খাওয়া পশু কোরবানির উদ্দেশ্য নয়।
কোরবানি করা পশুর গোশত কি করবেন; কিংবা কত দিন ধরে তা জমা করে রেখে খাবেন। এ স’ম্পর্কে ইস’লামের নির্দেশনাই বা কী’? কেননা কোরবানি আল্লাহর নৈকট্য লাভে আত্মত্যাগের অনন্য ইবাদতও এটি। এ ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয়বান্দা আরো বেশি প্রিয় হয়। যে ইবাদতের ব্যাপারে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন-‘সাম’র্থ্য থাকার পরও যে বা যারা কোরবানি থেকে বিরত থাকবে সে যেন আমা’র ঈদগাহে না আসে।’
এ কারণেই সাম’র্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মু’সলমান নারী-পুরুষ জ্বিলহ’জ মাসের ১০-১২ তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে কোরবানি করে থাকে।
কোরবানি যেহেতু আত্মত্যাগের অন্যতম ইবাদত, সেহেতু কোরবানির গোশত স’ম্পর্কেও রয়েছে ইস’লামের সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা। এ স’ম্পর্কে অনেকেরই রয়েছে অস্পষ্ট ধারণা বা জ্ঞান। যেমন-
-কেউ কেউ বলে থাকেন- ‘কোরবানির গোশত জমিয়ে রাখা যাবে না।’
– আবার অনেকে বলেন- ‘কোরবানি করে গোশত সাদকা করে দিতে হয়।’
– কারো কারো ধারণা- ‘৩দিনের বেশি কোরবানির গোশত জমিয়ে রাখা যাবে না।’
কোরবানির গোশত স’ম্পর্কে উল্লেখিত ধারণাগুলো ভুল। কোরবানির গোশত নিজেরা খেতে পারবে, অন্যকে হাদিয়া দেয়া যাবে এবং সংরক্ষণ করা যাবে। এ ব্যাপারে হাদিসে পাকে দিক-নির্দেশনা রয়েছে-
– হ’জরত সালামা ইবনে আকওয়া (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের যে লোক কোরবানি করেছে, সে যেন তৃতীয় দিনে এমন অবস্থায় সকাল অ’তিবাহিত না করে যে, তার ঘরে কোরবানির গোশতের কিছু থেকে যায়।
পরবর্তী বছর সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আম’রা কি তেমন করব, যেমন গত বছর করেছিলাম? তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন-
‘তোম’রা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং সঞ্চয় করে রাখ। কারণ গত বছর মানুষের মধ্যে ছিল অনটন। তাই আমি চেয়েছিলাম, তোম’রা তাতে সহযোগিতা কর।’ (বুখারি, মু’সলিম)
উল্লেখিত হাদিসে অন্যকে আহার করাও বলতে সমাজের গরিব অসহায়দের দান এবং ধনীদের উপহার দেয়া কথাই বুঝানো হয়েছে। কিন্তু কি পরিমাণ গোশত অন্যকে দান-সাদকা বা হাদিয়া দেবে সে স’ম্পর্কে কোরআন এবং সুন্নাহতে কোনো সুস্পষ্ট বিধান দেয়া নেই।
তবে ওলামায়ে কেরাম কোরবানির পশুর গোশত বিতরণের একটি মতামত পেশ করেছেন। আর তাহলো-
কোরবানির পশুর গোশত তিন ভাগ করে নিজেদের জন্য এক ভাগ রাখা; গরিব-অসহায়দের মাঝে এক ভাগ দান করা এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের মাঝে এক ভাগ বণ্টন করা মোস্তাহাব।’
সুতরাং ওলামায়ে কেরামের এ নির্দেশনা অনুযায়ী কোরবানির গোশত বণ্টন করা উত্তম। অ’তঃপর হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী দুর্ভিক্ষ কিংবা সমাজে অভাব-অনটন না থাকলে যতদিন ইচ্ছা ততদিন কোরবানির গোশত সংরক্ষণ করে খাওয়া যাবে। অন্য হাদিসে এসেছে-
– হ’জরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্নিত তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে আম’রা ম’দিনায় ফিরে আসা পর্যন্ত কোরবানির গোশত সঞ্চয় করে রাখতাম।’ (বুখারি)
আল্লাহ তায়ালা মু’সলিম উম্মাহকে কোরবানির গোশত বণ্টন স’ম্পর্কে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকা থেকে মুক্ত রাখু’ন। যারা কোরবানির গোশত গরিব-মিসকিনকে দিতে বিরত রয়েছেন; তারা সঞ্চয় করা গোশত থেকে গরিব-দুঃখী ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে গোশত বণ্টন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।